আপনি একজন উদ্যোক্তা। ব্যবসা করছেন। হোক সেটা ছোট কিংবা বড়। সবাই সাফল্য চায়। তবে আমরা জানি প্রতিটা সফলতার পিছনে ব্যর্থতার একটা গল্প আছে। এমন কোন সফল ব্যবসা আছে কী যা কোন দিন কোন সমস্যায় পড়ে নাই? মানুষের ব্যক্তি জীবন বলেন আর ব্যবসায়িক জীবনই বলেন না কেন জীবনে ছোট বড় বিভিন্ন সমস্যা আসবে। এবং এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারলেই আপনি হবেন সফল। আজ এটা নিয়েই আলোচনা করবো।
ছোট ব্যবসাটি সফল না ব্যর্থ তার উত্তরগুলো ব্যবসা পরিচালনার মূল কৌশলগুলোর মধ্যেই রয়েছে। প্রায়শই আমরা আমাদের সুন্দর আইডিয়াগুলোর বাণিজ্যিকীকরণ শুরু করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ি এবং নতুন উদ্যোগ শুরু করার জন্য এতটাই ব্যস্ত থাকি যে আমরা মৌলিক, সফল ব্যবসা পরিচালনার নীতিগুলি শিখতে সময় নিই না। এমন অনেক উদ্যোক্তাই আছেন তারা যা করেন তা প্রযুক্তিবিদ, বিশেষজ্ঞ কিংবা কোনও আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ বা পরিচালনা পদ্ধতি এবং কোনরূপ অভিজ্ঞতা ছাড়াই একটি ব্যবসায় শুরু করেন। অপর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনার ফলস্বরূপ, অনেক ছোট ব্যবসাই শুরুতেই ব্যর্থ হয়। তারা তাদের কাছে থাকা পণ্য বা পরিষেবার আইডিয়াগুলোর দুর্বলতার কারণে ব্যর্থ হয়।
সফল ব্যবসায় কি এমন আছে যা ছোট ব্যবসায়িদের সাফল্যের চুঁড়ায় পৌঁছে দেয় কিংবা কি এমন ব্যবায়িক দুর্বলতা আছে যা তার ব্যবসাকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে?
প্রথমত, সফল ব্যবসায়ের মালিকরা তার ব্যক্তিগত গুণাবলি, স্বভাব বা বৈশিষ্ট্যগুলোর বিকাশ করেন যা তাদের ব্যবসায়ের মধ্যে দিয়েই প্রদর্শিত হয়:
সফল উদ্যোক্তরা নিরবিচ্ছিন্নভাবে তাদের ব্যবসায় এবং সাধারণভাবে জীবনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব রাখে। সফল উদ্যোক্তা হতে গেলে অল্প কিছুতেই হতাশ হওয়া যাবে না। জীবনকে দেখতে হবে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে। শুধু ব্যবসায় নয় সাধারণ জীবনের প্রতি কখনও নেতিবাচক দৃষ্টি দেয়া যাবে না। ইতিবাচক মনোভাবাপন্ন উদ্যোক্তাগণ তাদের প্রচেষ্টার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কেবলমাত্র ‘পরিশ্রমের মাধ্যই সাফল্য আসে’ এই নীতিতে তারা বিশ্বাসী।
যারা সফল উদ্যোক্তা তারা ধৈর্য্যশীল। তারা খুব সহজেই বুঝতে পারে যে, বাধা এবং সুযোগের মধ্যে খুব সামান্যই পার্থক্য রয়েছে। তারা সুযোগ মতো এদুটোকেই তাদের সুবিধার্থে ব্যবহার করতে সক্ষম হন।সফল উদ্যোক্তা হতে হলে আপনাকে অধ্যবসায়ী হতে হবে। যেকোন বিপদে অটল থাকতে হবে।
দ্বিতীয়ত, সফল উদ্যোক্তাগন বা ব্যবসায়ের মালিকরা একটি কৌশলগত ব্যবসায়িক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। ব্যবসায়ের একটা নকশা তৈরি করেচন যা তাদের ব্যবসায়িক ধারণা, তাদের লক্ষ্য এবং তাদের ব্যবসায়ের দর্শনকে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন।
সব ব্যবসায়িক নথিপত্র, তাদের ব্যক্তিগত এবং কর্পোরেট লক্ষ্য নির্ধারণ করেন এবং সেগুলি অর্জনের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা এবং কৌশলগুলি নির্ধারণ করে দেন।
তৃতীয়ত, সফল ব্যবসায়ের মালিকরা বা উদ্যোক্তাগণ একটি সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি করেন যা একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করেঃ
এই কাঠামো, সমস্ত নীতি এবং পদ্ধতি সহযোগীদের তাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা সম্পাদন করতে উৎসাহ দেয়। মূলত এটা তাদের অবদানের অনুপাতে দক্ষতা অর্জনকারীদের পুরস্কৃত করে। এটা গ্রহণযোগ্য আচরণ থেকে বিচ্যুত ব্যক্তিদেরও শৃঙ্খলাবদ্ধ করে। পদ, কার্য, কর্তব্য এবং দায়িত্বগুলোকে সংজ্ঞায়িত করে এবং যোগাযোগ ও কর্ম সম্পাদান নিয়মিত হয়। সফল উদ্যোক্তাগণ তাদের সহযোগী ও কর্মীদের অতি মূল্যবান সম্পদ এবং সংস্থান হিসাবে বিবেচনা করে।
চতুর্থ এবং শেষটি হলো, সফল উদ্যোক্তাগণ বা ব্যবসায়ের মালিকরা অপারেশনাল সাপোর্ট সিস্টেমগুলি তৈরি করেনঃ
এগুলি আর্থিক বা আর্থিক নয়, ম্যানুয়েল বা স্বয়ংক্রিয় হতে পারে। এই ব্যবস্থারগুলোর উদ্দেশ্য হলো প্রতিষ্ঠানের সমস্ত কার্যক্রমকে সমর্থন এবং দক্ষ করে তোলা। এই ট্রাকিং সিস্টেমগুলোর সরবরাহিত তথ্য বিক্রয়, নগদ প্রবাহ ও অন্যান্য আর্থিক কার্য সম্পাদনের ডেটা সম্পর্কিত বিষয়াদি সরবরাহ করে যাতে কোন কিছু পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
সংক্ষেপে যদি বলি তাহলে বলা যায়, সাফল্যজনক ছোট ব্যবসায়ের চারটি নীতি হলো-
(১) উদ্যোক্তাগণ বা মালিকের এমন অভ্যাস এবং বৈশিষ্ট্য থাকা যা ইতিবাচক, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, ধৈর্যশীল এবং অবিচল।
(২) একটি জীবন্ত কৌশলগত ব্যবসায়ের পরিকল্পনা থাকা।
(৩) একটি সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি করা, যা মানুষকে তাদের সেরা হতে উৎসাহ দেয়
(৪) অপারেশনাল সাপোর্ট সিস্টেমগুলি ব্যবহার করা, যা কার্য সম্পাদন করতে এবং দৈনিক হিসাব বিবরণী রাথা যা ব্যবসা পরিচালনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে।