আমরা যারা উদ্যোক্তা হতে চাই তাদের প্রায় সবারই একটা কমন প্রশ্ন থাকে যে, শুরুটা কখন করবো? কিভাবে করবো? কোন সময়টাতে শুরু করলে সফলতা আসবে? এইসব ভেবেই কিন্তু অনেকেই দিনের পর দিন পার করে দিচ্ছেন। স্বপ্ন দেখছেন ঠিকই কিন্তু বাস্তবায়ন করতে পারছেন না। নানা কারণে। হতে পারে সেটা ব্যস্ততা, সময়ের অভাব, যথেষ্ট অর্থের যোগান না থাকা, অভাব সদিচ্ছার অভাব। এর জন্য কিন্তু এই “শুরু করবো” এই ভাবনাটাই দায়ী। এই ভাবনার কারণে অনেকেই শুরুই করতে পারে না।
উদ্যোক্তা হওয়ার কোন নির্দিষ্ট সময়ের দরকার নেই, নেই কোটি টাকার প্রয়োজনও। যা প্রয়োজন তা হচ্ছে আপনার ইচ্ছে শক্তি। যে কোন সময়ই আপনি নিজেকে উদ্যোক্তার খাতায় নাম লেখাতে পারেন। এর জন্য কোন সময়, দিন বা ঘন্টার দরকার নেই। শুরু করবো না, “শুরু করতে হবে এবং সেটা এখন“ এই ভাবনা নিয়েই আজই শুরু করুন। সফলতা আসবেই।
আপনি উদ্যোক্তা হলেন মানেই হলো আপনি যুদ্ধে নেমে পড়লেন। না, ভয় পাবেন না। এই যুদ্ধ অন্য যুদ্ধের মতো নয়। এই যুদ্ধ হলো আপনার ব্যবসার সঙ্গে আপনার নিজের যুদ্ধ। তবে কিভাবে বিজয় আসবে এই ধারণাটি কিন্তু আপনাকেই খুঁজে বের করতে হবে। কেননা শুরু যেহেতু আপনিই করবেন সেহেতু আপনিই জানেন বিজয়ের সূত্রটা কোথায় আছে।
আবারও বলছি ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আজ বিশেজ্ঞদের শেখানো এমন সাতটি কৌশল নিয়ে আলোচনা করবো যা কিনা একটা লাভজনক ব্যবসায়িক ধারণা পেতে আপনার সৃজনশীলতা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
১) নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন: এর পরে কী?
সফল ব্যবসায়িক ধারণা হলো সাধারণত সেই যা বিদ্যমান ব্যবসায়ের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে থাকে। নতুন ব্যবসা শুরু করার আগে ব্যবসার যে স্বাভাবিক প্রবণতা আছে সে সম্পর্কে এবং প্রযুক্তির বিষয়ে চিন্তা করুন এবং কীভাবে এবং কতো সহজে আপনি এগুলো আয়ত্ব করতে পারেন সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি কিভাবে ব্যবসা পরিচালনা করবেন? কতদূর এগিয়ে যেতে পারবেন? ব্যবসায় কোন সঙ্গীর প্রয়োজন বা পার্টনার লাগবে কিনা? লাগলে কে হবে আপনার পার্টনার। পার্টনার আপনার কতটুকু বিস্তস্থ? বিনিয়োগ এবং মুনাফা নিয়ে চিন্তা করুন। আপনার জীবনধারা সম্পর্কিত উদ্ভাবন এবং ভবিষ্যতে কীভাবে এগুলো পরিবর্তিত হবে সে সম্পর্কে চিন্তাভাবনা এখনই শুরু করে দিন।
২) বিরক্তিকর সমস্যার সমাধান করুন
আমরা প্রতিনিয়ত এমন কিছু সমস্যার সম্মুখীন হই যা প্রচন্ড বিরক্তিকর। প্রায়শইঃ মনে করি এইসব সমস্যা জীবনে না আসলেই ভালো হতো। অথচ আমরা একবারের জন্যেও ভাবি না যে, সমস্যা ছাড়া কোন মানুষ পৃথিবীতে নেই। উদ্যোক্তা হতে গেলে এমন সমস্যা আসবে যা কিনা প্রচন্ড বিরক্তিকর। আপনারকে এইসব সমস্যার সমাধান কিভাবে করতে হয় তা শিখতে হবে। সেটা করতে না পারলে মাঝপথে গিয়ে আটকে যাবেন। সমস্যার সম্মুখীন হলেই যে হাল ছেড়ে দিতে হবে বিষয়টি এমনও নয়। উদ্যোক্তা হতে গেলে কিছু সমস্যা আসবেই। এইসব সমস্যার সমাধান করে সামনে এগিয়ে যাওয়াই হলো একজন উদ্যোক্তার কাজ। তাহলেই আপনি উদ্যোক্তা জীবনে সফলকাম হবেন।
৩) নতুন আইডিয়া বা সুযোগ সন্ধান করুন
মনে রাখবেন যারা প্রকৃত উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ি তারা কিন্তু সব সময় নতুন নতুন আইডিয়া বা সুযোগের সন্ধান করে থাকেন। তারা জানেন কখন ব্যবসায় লাভ হবে এবং কখন লস হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে এর জন্য আপনাকে নতুন করে কিছু শুরু করার দরকার নেই। পুরাতনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একটা নতুন সুযোগ বা আইডিয়া ঢুকাতে হবে। বর্তমানে বিশ্বায়ানের এই যুগে সবকিছুতেই পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। ডিজিটাল যুগের সঙ্গে খাপ খাইতে হলে আপনাকেও নতুন আইডিয়া নিয়ে চলাফেরা করতে হবে। শিল্পায়নের এই যুগে কোথায় কি অনুপস্থিত তা একবার ভেবে দেখুন এই শূণ্যস্থানগুলো কি করে আপনি পূরণ করতে পারেন তা একবার ভাবুন। প্রয়োজনে প্রযুক্তির সহায়তা নিন। গুগলে সার্চ করুন। ইউটিউবে ভিডিও দেখুন। জানার অনেক উপায় আছে। প্রয়োজন শুধু আগ্রহ এবং সচেষ্ট মন।
৪) আপনার দক্ষতার যথাযথ প্রয়োগ করুন
দেখুন যারা বিভিন্ন কাজে দক্ষ দিন শেষে তারাই কিন্তু সকলের থেকে এগিয়ে থাকে একধাপ। কাজের বা ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে আপনি কতোটুকু দক্ষ সে বিষয়ে ভাবুন। কিভাবে সেগুলো অন্যান্য ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে সে সম্পর্কে ভাবেন। সবাই সব বিষয়ে সমান দক্ষ নাও হতে পারে। আপনি যে বিষয়ে দক্ষ সেই বিষয়টিকে যথাযথ প্রয়োগে সচেষ্ট হউন। শুধু শুধু বসে বসে না ভেবে আপনার দক্ষতার প্রয়োগ করুন। সফলতা ঠিকই ধরা দিবে।
৫) আপনার ব্যবসায় এমন কিছু বিষয় যোগ করুন যেটা এখনও কেউ করেনি
বুদ্ধিদীপ্ত হউন এবং বাজারে চলবে এমন কিছু সনাক্ত করুন যা সাম্প্রতিক সময়ে অনেকেই তাদের ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ায় এখনো যোগ করেননি।। ব্যবসায় নতুনত্ব আনুন, নতুন নতুন আইডিয়া, নিত্য নতুন পণ্য যোগ করুন। কী কী ধরণের ব্যবসা বাজারে চলছে সেটা নিয়ে ছোট আকারের হলেও একটা সমীক্ষা চালান। বাজারে চালু মূল্যের সাথে, প্রতিযোগীতামূলক মূল্য নির্ধারন্ করুন। আপনার আশেপাশের বন্ধুবান্ধব কিংবা সহকর্মী যারা কিনা খুব সৃজনশীল চিন্তার অধিকারী তাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আপনার বন্ধুর সৃজনশীলতা ও আপনার আগ্রহ-নির্দেশনার সমন্বয়ে একটি দারুণ আইডিয়ার জন্ম হতে পারে।
৬) লাভ কম করুন বিক্রি বেশি করুন
ব্যবসা কখন টিকে যায়? সহজ কথায় যখন ব্যবসাটি লাভের মুখ দেখে। ব্যবসা মানেই কিন্তু আপনাকে লাভ করতেই হবে। লস করে যদি ব্যবসা করে তাহলে সেই ব্যবসায় কদিন পরে লাল বাত্তি জ্বলে উঠবে। তবে এক্ষেত্রে একটি বিষয় মনে রাখবেন প্রতিযোগিতার এই বাজারে আপনি যদি বেশি সেল করতে না পারেন তাহলে টিকতে পারবেন না। আর টিকে থাকার একটিই উপায় তা হলো, বেশি বিক্রি। এজন্য কম লাভে বেশি বিক্রি করতে হবে। বেশি লাভ করে যদি কম বিক্রি করেন তাহলেও কিন্তু বিপদ আছে। ক্রেতারা যখন জেনে যাবে আপনি ব্যবসায় লাভের পরিমাণটা বেশিই করে তখন কিন্তু তারা আর আপনার কাছে আসবে না।
৭) ক্রেতার সঙ্গে কথা বলুন
মানুষের প্রয়োজনের সাথে সম্পর্কিত একটি ধারণা তৈরি করার জন্য, ক্রেতাদের সাথে কথা বলার চেয়ে আর কোন ভাল উপায় নেই। আপনি যদি কোনও বাণিজ্য – ব্যবসায়ের বিকাশ করতে চান তবে সম্ভাব্য গ্রাহকদের আগ্রহ এবং প্রয়োজনীগুলো কি কি হতে পারে তা জানার চেষ্টা করুন। এক কথায় ক্রেতার সঙ্গে কথা বলুন। তারা কি বলতে চায় তা মনোযোগ সহকারে শুনুন। তাদের সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসুন। মনে রাখবেন Customer is always right.