সাধারণত একাডেমিক শিক্ষা সমাপ্ত হলে আমরা সবাই চাকুরী নামক সোনার হরিণের পিছনে দৌড়ানো শুরু করে দিই। অনেকে সেই সোনার হরিণের নাগাল পেলেও আবার অনেকে দৌড়াতে দৌড়াতে এতোটাই ক্লান্ত হয়ে পড়ে যে, শেষমেষ হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে আশাই দেড়। অনেকেই আবার বেকারত্ব নামক বিশাল এক অভিশাপ নিয়ে দুর্বিষশ জীবন যাপন করেন। একটা সময় হয়তো ভাবেন, এ জীবনে কিছুই করতে পারবো না, কি লাভ হলো এতো শিক্ষা লাভ করে।
দোষটা আসলে কিন্তু আপনার কপালের নয়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আসলে আমাদেরকে খুব বেশিদূর এগিয়ে নিতে পারে না। নিজেকে একটা ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে হলে বা জীবনে ভালো একটা ক্যারিয়ার চাইলে নিজেকে সেইভাবে গড়ে তুলতে হবে।
আজকে এমন কিছু টেকনিক নিয়ে আলোচনা করবো যাতে করে কিনা চাকুরী পাওয়া অনেকেটাই সহজ হয়ে যাবে। বলা যায় চাকুরি আপনার পেছনে দৌড়াবে। তো মূল আলোচনায় যাই।
১। নিজের পছন্দের ক্যারিয়ার ঠিক করে নেয়াঃ আপনার নিজের ভেতর কতোটুকু আত্মবিশ্বাস আছে? নিজের পছন্দমতো পথ চলতে ভয় পেয়ে যান না তো? মনে রাখবেন নানা কারণে আমাদের মনে নানা প্রশ্ন এসে ভীড় করবে। এর মধ্যে থেকে ভালো, উত্তম প্রশ্নটা বেছে নিয়ে পথ চলতে হবে। নিজের কাজের প্রতি বিশ্বাস রাখবেন আর বিশ্বাস রাখলে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাটা তৈরি হবে। আপনার ক্যারিয়ার কি হবে তার সিদ্ধান্ত কিন্তু আপনাকেই নিতে হবে। নিজের পছন্দের ক্যারিয়ার কোনটা হবে, ঠিক করে নিন – এখানে ভুল হলে কিন্তু মাঝপথে মুখ থুবড়ে পড়ে যাবেন।
২। কাজে প্রতি দক্ষতা থাকাঃ সব বিষয়ে সবাই সমান দক্ষ না। জন্মের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ সব বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারে না। পরিবার, স্কুল/কলেজ ও বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে গিয়েও মানুষ কিছুটা দক্ষতা অর্জন করে থাকে। আর কিছু দক্ষতা অর্জন করা যায় প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। আপনার কাজ সম্পর্কে জানুন। কোন কাজে আপনি পারদর্শী? সে সম্পর্কে ভালো করে চিন্তা করুন। ইতিবাচক চিন্তাসহ নিজেকে অন্যের কাছে ভালো করে উপস্থাপন করতে শিখুন। আপনার চারপাশের পরিস্থিতি, বৈষয়িক অবস্থা, যে প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করতে চান সেই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা এসব সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার দক্ষতা থাকতে হবে। আপনার দক্ষতাই আপনাকে নিয়ে যাবে সাফল্যের চূড়ায়।
৩। যোগাযোগ বাড়িয়ে তুলনঃ মানুষ মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখবে এটাই স্বাভাবিক। আপনার একাডেমিক বিষয় যাই হোক না কেন, আপনি কোথায় চাকুরী করছেন সেটাও কোন ফ্যাক্টর না, আপনার মধ্যে যোগাযোগের দক্ষতা কতোটুকু আছে সেই বড় বিষয়। লেখাপড়া শেষ করে এখন আপনি চাকুরী জীবনে প্রবেশ করতে চাচ্ছেন কিন্তু আপনার স্কুল/কলেজ জীবনের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ আছে তো? তারা এখন কোথায় চাকুরী করছে জানেন? যদি না জানেন তবে জেনে নিন আজই। তাদেরকে ফোন, করুন, এসএমএস দিন, ম্যাজেঞ্জারে নক করুন, মেইল করুন। জন্মদিনে উইশ করুন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ান। কলেজ লাইফ থেকেই ভাষাগত দক্ষতা, ইতিবাচক শারীরিক ভাবভঙ্গি, লেখার দক্ষতা, গল্প বলার দক্ষতা, রসবোধ, শোনার আগ্রহ, পাবলিক স্পিকিং, সাক্ষাৎকার গ্রহণসহ ই–মেইল লেখা, নিজের বক্তব্য তুলে ধরার যোগ্যতা আয়ত্ত করার চেষ্টা করতে হবে। এসব বিষয়ে মনোযোগ দিয়ে কোথায় কোথায় দুর্বলতা আছে, তা খুঁজে বের করতে হবে। মনে রাখবেন, বাংলা ও ইংরেজি, দুটো ভাষাতেই যোগাযোগে আপনাকে দক্ষ হতে হবে।
৪। একটা স্ট্যান্ডার্ড বেইজড সিভি বানানঃ লেখাপড়া শেষ। এখন চাকুরী খোঁজার পালা। চাকুরীর খোঁজ করতে গিয়ে প্রথমেই যে কাজটি সবাইকে করতে হয় তা হলো ভালো মানের একটা সিভি বা জীবনবৃতান্ত তৈরি করা। সিভির গুরুত্ব অপরিসীম। একটা ভালো সিভি আপনাকে খুব সহজেই ইন্টাভিউ বোর্ড পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। ভাগ্য ভালো হলে চাকুরীও পেয়ে যেতে পারেন। মনে রাখবেন প্রথম অবস্থায় চাকরীদাতা কিন্তু আপনাকে দেখছে না দেখবে আপনার সিভি। তাই সিভি এমন ভাবে লিখতে হবে যেনো চাকুরীদাতা তথা যে সিভিটা দেখছে সে যেনো সিভি দেখছে না আপনাকেই দেখছে।
সিভি বানানো কিন্তু খুব সহজ কাজ নয়। সবাই এটা পারে না। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নানা কারণে সিভি তৈরি করতে হয়। সিভিতে নিজের পরিচয়, অর্জন, যোগ্যতার কথা খুব সংক্ষেপে তুলে ধরতে হয়।
একটা স্ট্যান্ডার্ড বেইজড সিভিতে যা যা থাকতে হবে তা হলো, নাম ও যোগাযোগের ঠিকানা, ছবি, পেশাগত লক্ষ্য, শিক্ষা, পেশাগত অভিজ্ঞতা, কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ, কম্পিউটার ও ভাষাগত দক্ষতা, একাডেমিক প্রকাশনা (যদি থাকে), শখ ও আগ্রহ এবং রেফারেন্স। আপনারা যদি চান তবে শুধু সিভি নিয়েই একটা আলাদা ভিডিও তৈরি করবো।
৫। ইংলিশে দক্ষতা অর্জন করুনঃ আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজির গুরুত্ব কতটা তা আমরা ভালভাবেই জানি। আমাদের দেশের উচ্চ শিক্ষা, কিংবা চাকরির জন্য বর্তমানে ইংরেজী ভাষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে খুব বেশি। আর তাই ইংলিশ স্পোকেনে দক্ষতা থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে অফিস/আদালত প্রতিটা ক্ষেত্রেই এখন ইংরেজী ভাষা শেখা প্রয়োজন। ঠিকভাবে ইংরেজি বলতে ও বুঝতে পারা ক্যারিয়ার গঠনেও সহায়ক। তাই অন্যান্য যোগ্যতার পাশাপাশি ভাল ইংরেজি জানা থাকলে জীবনে এগিয়ে যাওয়াটাও অনেক গতিশীল হয়।
৬। কম্পিউটার শিখুনঃ এ্যাডভান্স লেভেল না পারলেও ইন্টারমিডিয়েট লেভের পর্যন্ত শিখতে চেষ্টা করুন। যদি সেটাও না পারেন কমপক্ষে বেসিক লেভেলটা শেষ করুন। বাকিটা কাজ করতে গিয়ে নিজেই শিখে যাবেন।