ফুলকে বলা হয় ভালোবাসার প্রতীক। প্রেম নিবেদনে ও শুভেচ্ছা জানাতে ফুলের জুড়ি নেই। পৃথিবীর প্রতিটা মানুষই ফুলকে ভালোবাসে। ফুলের যেমন আছে নিজস্ব সৌন্দর্য তেমনি আছে তার বিচিত্র মন মাতানো সুবাস, যা সবাইকে আকৃষ্ট করে। পৃথিবীতে প্রায় চার লাখ প্রজাতির ছোট-বড় উদ্ভিদের মধ্যে তিন লাখ উনশত্তর হাজার চারশ নানা বর্ণের, নানা গন্ধের ছোট-বড় ফুল দেখতে পাওয়া যায়।
এর মধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফুল হলো র্যাফলেশিয়া। এই ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম রাফলেশিয়া আরনোলিডি (Rafflesia Arnoldii). ইন্দোনেশিয়ার বোর্নিও ও সুমাত্রাদ্বীপ, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়াতে এই ফুল পাওয়া যায়।
র্যাফলেশিয়ার কোনো পাতা ও শেকড় নেই। এটি পরজীবীর মতো অন্য গাছের পানি ও পুষ্টি শোষণ করে বেঁচে থাকে। একমাত্র ফুল ফুটলেই এদের খুঁজে পাওয়া যায়। মূল, কাণ্ড, পাতাবিহীন টকটকে লালের ওপর সাদা ছিট দেওয়া এই ফুলটি মূলত পরজীবী। পাতা না থাকায় নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে না। অন্য কোনো গাছের শেকড়ের ওপর এর বীজ অঙ্কুরিত হয়।
এক একটি র্যাফলেশিয়ার ওজন প্রায় সাত থেকে এগার কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে আকারে যতই বড় হোক, আয়ু কিন্তু বেশি নয়। মাত্র সপ্তাহখানেক টিকে থাকে এ ‘মনস্টার ফ্লাওয়ার’।
র্যাফলেশিয়ার ফুলের বৈশিষ্ট্যও কিন্তু কম বিচিত্র নয়। র্যাফলেশিয়ার ফুলের সৌন্দর্য ফুলপ্রেমীদের মুগ্ধ করলেও এর গন্ধ মানুষকে কোনোভাবেই আকৃষ্ট করে না। একে তো আকারে বিশাল, তার ওপর রয়েছে প্রচণ্ড দুগর্ন্ধ। অনেকটা মাংস পচা গন্ধ ছড়ায় এ ফুল থেকে। একারণে সেটিকে ‘কর্পস ফ্লাওয়ার’ও (লাশ ফুল) বলেন অনেকে। মানুষের কাছে র্যাফলেশিয়ার গন্ধ দুর্গন্ধ মনে হলেও কীটপতঙ্গের কাছে এটি সুগন্ধি ফুল। এই পচা গন্ধতে পোকা-মাকড় আকৃষ্ট হয় ও র্যাফলেশিয়ার পরাগায়ন ঘটায়। আর এভাবেই ফুলটি টিকে আছে বহুকাল ধরে।