উদ্যোক্তা কাকে বলে?
আপনি নিজেই নিজের বস! কি অবাক হচ্ছেন তাই না? আচ্ছা তার আগে বিষয়টা নিয়ে একটু চিন্তা করুন তো? কিভাবে আপনি খুব সহজেই নিজেই নিজের বস হতে পারেন। আর এই নিজেই নিজের বস হওয়াটা কিন্তু আপনার জন্য, আপনার ব্যবসার জন্য খুবই ফলপ্রসূ হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে এটা কিন্তু সবার জন্য নাও হতে পারে।
যে কোন উদ্যোগ নেওয়ার আগে বা কোন পদক্ষেপ নেওয়ার আগে একজন উদ্যোক্তা হতে যা যা লাগবে তা খুঁজে বের করুন, উদ্যোক্তা হওয়ার সুবিধাগুলো কি কি এবং আপনার সাফল্যের সম্ভাবনা সম্পর্কে আপনি কতটুকু নিশ্চিত? এইসব বিষয়ে একটু চিন্তা করুন।
আপনার আর্থিক সম্পদের মূল্যায়ন
ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে অবশ্যই আপনার আর্থিক সম্পদের হিসাব করতে হবে। আপনাকে অনুমান করতে হবে, কি পরিমাণ অর্থ আপনি বিনিয়োগ করতে চান। আপনার বর্তমান প্রয়োজনীয় ব্যয় এবং আরামদায়ক জীবনযাপন চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম আয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হবে। আর্থিক সম্পদের মূল্যায়ন করার সময় আপনাকে কিছু বিষয় জানা থাকতে হবে। যেমন:
আপনার জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে প্রয়োজনীয় আয় অনুমান করুন
ব্যবসা থেকে আপনার ন্যূনতম মাসিক কি পরিমাণ অর্থ আপনার জীবনযাত্রার ব্যয় করতে চান তার একটা হিসাব করতে হবে।
এক্ষেত্রে ব্যয়ের খাতগুলো আপনি যোগ করতে পারেন যেমন:
খাদ্য ও পোশাক তথা পারিবারিক খচর
যদি আপনার ঋণ এবং ক্রেডিট কার্ড থাকে তার মাসিক পেমেন্ট
দোকান ও এবং যদি ভাড়া বাসায় থাকেন তার পেমেন্ট
অটোমোবাইল খরচ
ছেলে-মেয়ের স্কুল / কলেজ খরচ
চিকিৎসা খরচ ইত্যাদি
এটা গেল আপনার ব্যবসা থেকে আয়ের ওপর ব্যয়ের খরচ। এরপর আপনার অন্যান্য উৎস থেকে যদি কোন আয় থাকে তবে সেই আয়ও যোগ করবেন।
আপনার ক্যাপিটেল অ্যাসেট অর্থ্যাৎ আপনার মূলধন সম্পদের অনুমান
আপনার পরবর্তী পদক্ষেপ হবে আপনি আপনার ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক এমন মূলধন যেমন, (অর্থ, সম্পত্তি এবং প্রচেষ্টা) নির্ধারণ করা।
ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান পেতে হয়তো বা আপনাকে কিছু ব্যক্তিগত সম্পদ বিক্রি করতে হতে পারে। এই ক্যাপিটেল অ্যাসেট মূল্যায়ন করার সময়, আপনাকে অবশ্যই আপনার নেট সম্পদের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে ।
ক্যাপিটেল অ্যাসেট হিসাবে আপনার কি কি থাকতে পারে চলুন একটু জেনে আসি।
নগদ অর্থ, বিনিয়োগ, আবাসন, অটোমোবাইল ,জীবনবীমা ইত্যাদি
ঝুঁকি চিহ্নিত করণঃ
আপনার উদ্যোগ বা ব্যবসাটি কিন্তু বিভিন্ন কারণে ব্যর্থ হতে পারে। তাই ঝুঁকিগুলো সনাক্ত করা আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যার মধ্যে রয়েছে:
- অভিজ্ঞতার অভাব
- ভুল পণ্য
- অর্থের অভাব
- অনুপযুক্ত মূল্য (খুব বেশি/খুব কম)
- ইনভেন্টরি অব্যবস্থাপনা
- ভাড়া এবং অন্যান্য সরঞ্জামের জন্য অত্যধিক ব্যয়
- অপরিকল্পিত ভাবে ব্যবসার পরিধি বাড়ানো
- ভুল মনোভাব
- ভুল অবস্থান
- পারিবারিক চাপ
ঝুঁকি কমানোর কৌশল
ব্যবসা শুরুর আগে আপনার প্রথম চ্যালেঞ্জ হল ঝুঁকির যে স্তরগুলো আছে সে সম্পর্কে জানা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া।
আপনার যারা ক্রেতা হবেন এমন লোকজনের সাথে কথা বলা এবং সম্ভব হলে সম্ভাব্য ক্লায়েন্টদের সাথে দেখা করুন আপনার ধারণা নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করুন এবং গ্রাহক হিসাবে তারা কী চায় তা জানতে চেষ্টা করুন।
বাজারে আপনার সম প্রতিযোগি যারা আছে তাদেরকে চিহ্নিত করুন এবং দেখুন কী কী কারনে তারা সফল। তারা কিভাবে কাস্টমার সার্ভিস দিচ্ছে, তাদের পণ্য বা পরিষেবাদি কিভাবে সংগ্রহ করছে?
আপনার ব্যবসা চালানোর দক্ষতা আপনার আছে তা নিশ্চিত করুন। প্রয়োজনে, বুককিপিং, মার্কেটিং, কর্মী ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির উপর অতিরিক্ত কোন কোর্স করতে পারেন।
ব্যবসা করতে গেলেই কিছু কাগজপত্রের দরকার হয়। যেমন ট্যাক্স, টিন নম্বর, পরিবহনের জন্য গাড়ির কাগজপত্র, অগ্নি, নিরাপত্তা ইত্যাদি। এগুলো সব সময় আপ টু ডেট রাখার চেষ্টা করতে হবে।
প্রথম অবস্থায় পুরোপুরি বাজারি ব্যবসায় না নেমে প্রথমে পার্ট-টাইম বা ফুল-টাইম ভিত্তিতে একটি হোম-ভিত্তিক ব্যবসা শুরু করার কথা ভাবুন।
৩. আপনি নিজেই ব্যবসা শুরু করবেন? নাকি কোন চালু ব্যবসা কিনবেন।
প্রথম দিকে হয়তো বা ব্যবসা শুরু করা একজন নতুন উদ্যোক্তার জন্য খুবই কঠিন হতে পারে। তবে হ্যাঁ, আপনার যদি কোন দূর্দান্ত ব্যবসায়িক আইডিয়া থাকে এবং আপনি একটা ভিত্তি তৈরি করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে প্রস্তুত থাকেন, তাহলে আপনি নিজের ব্যবসা নিজেই শুরু করতে চাইতে পারেন তাও এক্ষুনি।
কিন্তু আপনি যদি দ্রুত ব্যবসায় নামতে চান এবং কিছু স্টার্ট-আপ সমস্যা এড়াতে চান তবে আপনার জন্য ভালো হবে একটা চালু ব্যবসা বা সফল ফ্রাইঞ্চাইজি কিনে ব্যবসায় নেমে পড়া। এটি একটা ভালো বিকল্প হতে পারে আপনা জন্য।
একটি বিদ্যমান ব্যবসা বা চালু ব্যবসা কিনে কি লাভ হতে পারে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
- একটি ব্র্যান্ড তৈরি, গ্রাহক সম্পর্ক উন্নয়ন, ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া বিকাশ এবং সম্পদ অর্জনের বিষয়ে ইতিমধ্যেই করা কাজ থেকে উপকৃত হন।
- আরো দ্রুত মুনাফা আনা শুরু করতে পারেন.
- ইত্যোমধ্যে ব্যবসায়িক মডেল প্রতিষ্টিত হওয়ায় বিভিন্ন খাত থেকে অর্থায়ন পেতে সহজ হবে
৪. আপনার নিজের ব্যবসা তৈরি করুন- আইডিয়া ডেভেলপ করুন
আপনি যদি একটি নতুন ব্যবসা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আপনাকে আপনার ব্যবসার ধারণা তৈরি করতে কিছু সময় ব্যয় করতে হবে। একজন উদ্যোক্তা হওয়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এমন কিছুতে কাজ করতে পারা যা আপনার আগ্রহ এবং যে বিষয়ে আপনি আগ্রহী তার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।
গবেষণা, গবেষণা, গবেষণা! আপনার পণ্য বা পরিষেবার সম্ভাব্য চাহিদা, আপনার প্রতিযোগীদের সম্পর্কে এবং আপনার সম্ভাব্য গ্রাহকদের চাহিদা এবং চাওয়া সম্পর্কে আপনি যত বেশি তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন, আপনি তত বেশি সফল হতে পারবেন।
একটি ব্যবসা শুরু করার আগে, আপনাকে আপনার ধারণাটি মূল্যায়ন করতে হবে এবং সেই ধারণা থেকে লাভের সম্ভাবনা কতটুকু তাও নির্ধারণ করতে হবে।
আপনার আইডিয়া বিকাশ: আপনার ব্যবসার ব্যবসার আইডিয়া কীভাবে মূল্যায়ন করবেন এবং আপনার প্রকল্প বাস্তবায়ন করবেন তা খুঁজে বের করুন।
বাজার গবেষণা ভূমিকা: আপনার গ্রাহক এবং প্রতিযোগীদের সম্পর্কে সঠিক এবং নির্দিষ্ট তথ্য কিভাবে পেতে হয় তা জানুন।
মার্কেট সেগমেন্টে আপনার গ্রাহকদের গ্রুপ করুন: আপনার গ্রাহকগণ আসলে কী চায় এবং কীভাবে গ্রাহকদের ধরে রাখতে হয় তা আরও ভালভাবে বোঝার জন্য কীভাবে আপনার গ্রাহকদেরকে বাজারের বিভাগে গোষ্ঠীভুক্ত করতে হয় তা শিখুন।
আপনার গ্রাহকদের চাহিদা জানুন: আপনার গ্রাহকদের সম্পর্কে আপনার কী জানা দরকার এবং তাদের কাছে আরও বেশি বিক্রি করার জন্য কীভাবে তথ্য ব্যবহার করবেন তা জানুন।
আপনার প্রতিযোগীদের জানুন: কীভাবে আপনার প্রতিযোগীদের শনাক্ত করবেন, তারা কী করে, কিভাবে পণ্য সংগ্রহ করে, কিভাবে কাস্টমার সেবা দেয়, কেমন করে বাজার গবেষণা করে তা জানতে চেষ্টা করুন।
৫. আপনার গ্রাহক কে?
আপনি কিছু বিক্রি শুরু করার আগে, আপনি কার কাছে বিক্রি করছেন তা জানতে হবে। আপনি যদি নির্ধারণ না করে থাকেন যে আপনার টার্গেট গ্রাহক কারা হবেন, তাহলে আপনি সম্ভবত সব মানুষের কাছে যেতে পারবেন না।
আপনার গ্রাহকদের একটি সাধারণ প্রোফাইল তৈরি করার সময়, আপনি তাদের জনসংখ্যাগত বৈশিষ্ট্য দ্বারা সংজ্ঞায়িত করতে চাইতে পারেন, যেমন:
– বয়স, কি কি পণ্য বিক্রি করবেন তার ওপর নির্ভর করবে
-সেক্স
-বৈবাহিক অবস্থা
-পরিবারের অবস্থান (গ্রামে না শহরে)
-পরিবারের আকার এবং বিবরণ
-আয়, (কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় করবেন সেই ধারণা)
– শিক্ষার স্তর,
– পেশা
উদাহরণ স্বরূপ, একজন পোশাক প্রস্তুতকারক বা বিক্রেতা অনেকগুলো সম্ভাব্য টার্গেট বাজার বিবেচনা করতে পারে — ছোট বাচ্চা, কিশোর/কিশোরি, যুবক/যুবতী, বয়স্ক, ক্রীড়াবিদ, দাদা-দাদি, এবং পর্যটক। এই সম্ভাব্য বাজারগুলোর প্রতিটির একটি সাধারণ প্রোফাইল প্রকাশ করবে কোনটি বেশি বাস্তবসম্মত, কম ঝুঁকি তৈরি করে এবং লাভ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সবচেয়ে সম্ভাব্য টার্গেট গোষ্ঠীর একটি পরীক্ষার বাজার সমীক্ষা, বা যারা তাদের জন্য কেনেন, যেমন শিশু এবং ছোটদের জন্য পিতামাতা, আপনাকে সব সম্ভাবনা থেকে প্রকৃত লক্ষ্যযুক্ত বাজারগুলো আলাদা করতে সাহায্য করতে পারে।
৬. আপনার পণ্য বা পরিষেবা কি বাজারে বিদ্যমান ব্যবসাগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হবে?
একবার আপনি আপনার গ্রাহক কারা তা খুঁজে বের করার পরে, আপনাকে দেখতে হবে যে অন্য কে একই ধরনের পণ্য বিক্রি করছে এবং তারা কোথায় বিক্রি করছে। আপনি কি এমন একটি পণ্যের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন যা ইতিমধ্যেই বাজারজাত করা হয়েছে? যদি আপনার আইডিয়াটি একটি ভোক্তা পণ্য হয়, তাহলে তার বাজার, গ্রাহক চাহিদা ইত্যাদি পরীক্ষা করুন বা অন্যান্য কি কি পণ্য পাওয়া যায় এবং কোন কোন কোম্পানি সেগুলো বাজারজাত করে তা খুঁজে বের করুন। আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে কেন গ্রাহকরা আপনার কাছ থেকে কিনবেন আপনার প্রতিযোগীর কাছ থেকে নয়। আপনার পন্যের গুণগত মান কেমন? বিদ্যামন বাজার তুলনায় আপনার দাম কম? এটা করার সর্বোত্তম উপায় হল বিদ্যমান ডেটা ব্যবহার করে বা আপনার নিজের সমীক্ষা করে বাজার গবেষণা পরিচালনা করা।
৭. আপনি কীভাবে আপনার পণ্য বা পরিষেবাদি বিক্রি বা বিতরণ করবেন?
আপনার পণ্য বা পরিষেবাদি বিক্রি বা বিতরণ করার জন্য, আপনি হয় আপনার নিজের কোম্পানি শুরু করতে পারেন বা আপনার কাছ থেকে পণ্য কিনতে বাজারে বিদ্যমান কোন দোকান বা কোম্পানিকে রাজি করার চেষ্টা করতে পারেন। আপনার পণ্য বা পরিষেবাদি বিক্রি বা বিতরণ করার জন্য অন্য কোম্পানিকে রাজি করার চেয়ে আপনার নিজের কোম্পানি শুরু করা বা নিজেই একটা দোকান দিয়ে পণ্য বিক্রি করা সহজ হতে পারে।
৮. আপনি কিভাবে আপনার পণ্য বা সেবা প্রচার করবেন?
গ্রাহক যদি আপনার পণ্য বা পরিষেবা না কেনে তাহলে কিন্তু আপনার উদ্যোগ বা ব্যবসাটি সামনে এগিয়ে নেওয়াটা আপনার জন্য খুবই কষ্টকর হবে। এবং একটা সময়ে গিয়ে আপনার উদ্যোগ বা ব্যাবসাটি কিন্তু মুখ থুবড়ে পড়ে যাবে এবং আপনি ব্যর্থ হয়ে যাবেন।
আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন কিভাবে সম্ভাব্য গ্রাহকরা আপনার পণ্যর খোঁজ পাবে? আপনার পণ্য বাজারজাত করার কিছু উপায় হল:
– আপনার একটি ওয়েবসাইট থাকা এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে সক্রিয় থাকতে হবে।
– বিভিন্ন ট্রেড শো-এ অংশগ্রহণ করা এবং ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে পরিচিত হওয়া
– সংবাদপত্রে, রেডিওতে, টেলিভিশনে এবং ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন দেওয়া
– ব্রোশিওর, লিফলেট ও পোস্টার বিতরণ