গ্রহে হচ্ছে বালুবৃষ্টি । মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার টেলিস্কোপ ভিন্ন আচরণ করে এমন একটি গ্রহের খোঁজ দিচ্ছে। সেখানে রীতিমতো বালুবৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জ্যোতির্বিদেরা। প্ল্যানেট ওয়াস্প-১০৭ বিতে বালুবৃষ্টির খোঁজ মিলেছে। সেখানে তাপমাত্রা অনেক বেশি আর প্রচণ্ড বাতাস ও সালফার ডাই–অক্সাইডের পোড়া গন্ধ রয়েছে। প্রথমবারের মতো অন্য কোনো গ্রহে মেঘের রাসায়নিক গঠন শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সেখানে পাওয়া সিলিকেট বালু সবচেয়ে বেশি চমক তৈরি করেছে।

নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের লেন্সে ধরা পড়েছে এই গ্রহ। গ্রহটি ভারগো বা কন্যা নক্ষত্রমণ্ডল থেকে প্রায় ২০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বেশ মনোযোগ দিয়েই গ্রহটির ওপর চোখ রাখছেন। গ্রহটি আকারে খুব বড় কিন্তু বেশ হালকা। হাওয়াই মিঠাই বা ক্যান্ডি ফ্লস নামে গ্রহটির ডাকনাম দেওয়া হয়েছে।

নতুন খোঁজ পাওয়া এই গ্রহে বৃষ্টি, উচ্চ তাপমাত্রা, প্রচণ্ড বাতাস আর সালফার ডাই–অক্সাইডের পোড়া গন্ধ রয়েছে। গ্রহটি ২০১৭ সালে আবিষ্কৃত হয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা গ্রহটিকে পর্যবেক্ষণের সময় আলোর ঝিকিমিকি দেখেছিলেন। যে তারাকে কেন্দ্র করে গ্রহটি ঘুরছে, তার আলো বেশি হওয়ার কারণে ঝিকিমিকি দেখা যায়। রাস্তার বাতির সামনে যেমন মাছি ওড়ে, তেমন করেই গ্রহটিকে প্রথমবার দেখেছিলেন বিজ্ঞানীরা। জেমস ওয়েবের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে গ্রহের বায়ুমণ্ডল নিয়ে গবেষণা করেন বিজ্ঞানীরা। আলো পরিমাপ করে বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করা হয়। বিভিন্ন আলো বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের হয় বলে আলোর বর্ণালি নির্দেশ করছে, গ্রহটিতে কোন গ্যাস রয়েছে। নতুন শনাক্ত করা এই গ্রহ ভরের দিক থেকে নেপচুনের মতো কিন্তু আকারে বৃহস্পতি গ্রহের প্রায় সমান। বিশালাকার হওয়ার কারণে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ গ্রহটির বায়ুমণ্ডলের গভীরের তথ্য অনুসন্ধান করতে পেরেছে।

যুক্তরাজ্যের ওপেন ইউনিভার্সিটির গ্রহবিজ্ঞানী ড. জোয়ানা বার্স্টো বলেন, এটি একটি দুর্দান্ত আবিষ্কার। গ্রহটি তুলতুলে ধরনের। তুলতুলে এই গ্রহের বায়ুমণ্ডল থেকে আমরা ভবিষ্যতে চমৎকার তথ্য পেতে পারি। আমরা ১০ বছর ধরে ভবিষ্যদ্বাণীর ওপর কাজ করেছি। কিন্তু আমরা আসলে যা দেখছি, তা আমাদের চমকে দিয়েছে। আমরা যা খুঁজে পাচ্ছি আর যা তথ্য পাচ্ছি, সবই চমকে দেওয়ার মতো। তাপমাত্রা প্রায় এক হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস। বালুর ধূলিকণার মেঘ পুরো গ্রহটিকে ঘিরে রেখেছে। সেখানে বৃষ্টিপাত না হয়ে বালুপাত হয়। গ্রহটির মেঘ ধোঁয়াটে ধুলার মতো। সেখানে বালুর কণা উচ্চগতিতে চারপাশে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতি সেকেন্ডে বলা যায়, কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটছে বালু। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের অন্যতম কাজ হচ্ছে, দূরবর্তী গ্রহের বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ করে জীবের উপস্থিতি বের করা। বায়োসিগনেচার গ্যাসের সন্ধান করছে টেলিস্কোপটি। নতুন এই গ্রহের তাপমাত্রা অনেক বেশি আর শক্ত পৃষ্ঠের অভাবে সেখানে মানুষ কখনোই বসবাস করতে পারবে না। গ্রহটির পরিবেশ কোনোভাবেই মানুষের অনুকূলে নেই। মহাবিশ্বের অনেক বিস্ময় আছে।

By Moksedul Islam

I am Moksedul Islam. Writer, poet and storyteller. An entrepreneur. Love to write and read. Writing is my hobby.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *