পরিবারের সবার চাওয়া থাকে কিছুটা বাড়তি আয়ের। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির এমন কিছুটা বাড়তি যেমন পরিবারে স্বচ্ছন্দ বয়ে আনে তেমনি মাস শেষে কিছু টাকা সঞ্চয়ও হতে পারে। তবে এর জন্য কিছু বাড়তি বুদ্ধি খরচ করতে হয়। খুব অল্প টাকায়, স্বল্প জায়গায় কি কি ব্যবসা করে আপনি লাভবান হবেন আজকে তাই আলোচনা করবো।
আপনার যদি উদ্দেশ্য থাকে ঘরে বসে কিছু অতিরিক্ত অর্থ আয় করার তবে আজকের লেখাটি আপনার জন্য। আপনার বসতভিটা বা বাড়ির আশেপাশে যদি কোন জায়গা পড়ে থাকে হতে পারে সেটা বাড়ির উঠোনও। তবে এমন জায়গায় কিছু ব্যবসা করে আপনি বাড়তি ইনকাম করতে পারেন। এই বিষয়ে যদি আপনার কিছু ব্যবসায়িক ধারণা দরকার যা আপনি আপনার বাড়ির উঠোন থেকে খণ্ডকালীন শুরু করতে পারেন তবে এই লেখাটি আপনার জন্য।
বর্তমানে আয়ের একটি মাত্র উৎস দিয়ে জীবন চাকা ঘুরানো ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে। আর তাই প্রতিনিয়ত প্রচুর সংখ্যক মানুষ তাদের নিজস্ব আয়ের বাইরে অতিরিক্ত আয়ের ব্যবসা শুরু করার সম্ভাবনাগুলোর খোঁজ করছে। পার্টটাইম বা খণ্ডকালীন ব্যবসার এই প্রচেষ্টার বেশিরভাগই বাসা থেকেই শুরু এবং পরিচালনা করা যেতে পারে।
যাইহোক, এই ব্যবসাগুলো শুরু করার আগে আপনাকে প্রথমে যা করতে হবে তা হল কিছু মৌলিক বাজার গবেষণা। আপনার এলাকার কতজন লোক আপনার প্রস্তাবিত বা উদ্ভাবিত পণ্য বা পরিষেবা পেতে আগ্রহী সেটা আপনাকে জানতে হবে। পণ্যগুলোর বাজার চাহিদা, মূল্য এইসব বিষয়ে জেনে তারপর আপনাকে এই ব্যবসায় নামতে হবে।
এই বাজার গবেষণা আপনি কেন করবেন? দেখুন এর মাধ্যমে আপনি আপনার বাজারকে সংজ্ঞায়িত করা এবং আপনার গ্রাহকদের চিহ্নিত করতে পারবেন। এর ফলে আপনার বিদ্যমান ব্যবসায়িক পরিকল্পনা আরও সুনির্দিষ্ট হবে। ব্যবসা করতে গেলে যে সমস্ত কাজ করতে হবে তা কীভাবে করবেন তার সাথে এসব সম্পর্কিত এবং এটা আপনার ব্যবসার সমস্ত ভিত্তিকে যতটা কভার করবে সাফল্য অর্জন করাও আপনার পক্ষে তত সহজ হবে।
সবচেয়ে ভালো আপনার পরিকল্পনাগুলো কোথা লিখে রাখা। আপনি কিভাবে শুরু করবেন, কত টাকা লাগতে পারে, পণ্য কোথা থেকে আসবে, কোথায় বিক্রি করবেন, কিভাবে বিক্রি করবেন, আপনার ক্রেতা কারা হবে বিস্তারিত তথ্যগুলো নিয়ে একটা ব্যবসার পরিকল্পনা দাড়ঁ করিয়ে নিন। মনে রাখবেন আপনার কাছে যখন ব্যবসার সমস্ত খুঁটিনাটি পরিষ্কার হয়ে যাবে এখান থেকে আপনার সাফল্য অর্জনের সম্ভাবনা তত ভাল হবে।
এতোদিন আপনি হয়তো আপনার বাড়ির উঠোনটাকে এমনি এমনি ফেলে রেখেছিলেন। বাড়ির ফেলে রাখা এই জায়গাটি থেকেও যে লাভজনক অর্থ উপার্জন করা যায় এই ধারণাটি কখনই আপনার ছিল না।
আজকের লেখার মাধ্যমে আমি আপনাকে এমন কিছু পরামর্শ দিব যা কিনা ফেলে এই উঠোনটিই হতে আপনার অর্থ উপার্জনের অন্যতম একটি মাধ্যম। এই লেখায় ১২টি উপায় নিয়ে আলোচনা করবো যার মাধ্যমে আপনি আপনার উঠোনটিকে সদ্বব্যবহার করে অর্থ উপার্জন করে সাফল্য অর্জন করতে পারেন।
১) খরগোশ পালনঃ আমরা অনেকেই শখের বসে খরগোশ শখে লালন-পালন করি। গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে এটি খুবই জনপ্রিয়।খরগোশ অত্যন্ত অমায়িক একটি প্রাণী। তৃণভোজী ও স্তন্যপায়ী। এদের লেজ খাটো, কান ও পেছনের পা লম্বা। গৃহপালিত খরগোশগুলো হল প্রজননকারী, এসব খরগোশ প্রচুর পরিমাণে সুস্বাদু মাংস উৎপাদন করে। তাদের উৎপাদনের হার শুকর, ছাগল বা ভেড়ার তুলনায় দ্রুত। খরগোশের গর্ভধারণের সময়কাল খুব কম থাকে সাধারণত ২৭ – ৩৩ দিন হয়ে থাকে এবং এবং প্রসবের পরপরই প্রজনন করতে পারে। বর্তমানে খরগোশ বাজারও অনেক ভালো। সৌখিন থেকে শুরু করে সব ধরনের মানুষই খরগোশকে ভালোবাসে। বাড়ির উঠোনে ছোট্ট একটি জায়গায় আপনি খরগোশ পালন করেও অনেক টাকা ইনকাম করতে পারেন।
২) লন্ড্রি / ইস্ত্রি / কাপড় পরিষ্কার পরিষেবাঃ প্রত্যেকটি পরিবারেই লন্ড্রি এবং ইস্ত্রি করার মতো প্রচুর ময়লাযুক্ত কাপড়-চোপড় থাকে। ব্যস্ততার কারণে অনেক পরিবারই কিন্তু এসব জামাকাপড় সময়মতো পরিষ্কার ও লন্ড্রি করার সময় পান না। এই সুযোগটাই আপনাকে নিতে হবে। আপনার বাড়ির উঠোনে একটি ছোট দোকান দিয়ে এই পরিষেবাটি দিতে পারেন। আপনি লন্ড্রি / ইস্ত্রি / কাপড় পরিষ্কার করে অর্থ উপার্জন করবেন। বর্তমান সময়ে প্রায় সবাই কর্মব্যস্ত জীবন কাটান। জীবনের নিত্য প্রয়োজনীয়তাগুলো পূরণ করার জন্য কর্মজীবীদের হাতে সময় খুবই কম। আপনার বাড়ির উঠোনে যদি দোকান দেওয়ার মতো জায়গা থাকে যেখানে গ্রাহকদের জামাকাপড় রাখতে পারবেন, বাছাই করতে পারবেন, লন্ড্রি / ইস্ত্রি / কাপড় পরিষ্কার করতে পারবেন তাহলে এই ব্যবসাটি আপনার জন্য সেরা হতে পারে।
৩) জ্বালানী কাঠ সরবরাহঃ বর্তমান সময়ে জ্বালানি ও তেল উভয়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই তাদের খাবার রান্না করতে কাঠের চুলা এবং উনুন বা চুলার দিকে ফিরে যাচ্ছেন। কাঠ পুড়িয়ে রান্না করা সহজ এবং তেল এবং গ্যাসের তুলনায় কম ব্যয়বহুল।
আপনার যদি যেকোন ধরনের কাঠ, কাঠের গাছপালা (গাছ এবং গুল্ম) দ্বারা আচ্ছাদিত জমি থাকে এবং কাঠ জাতীয় গাছ জোগাড় করার মতো উপায় থাকে, তাহলে আপনি আপনার বাড়ির উঠোনকে একটি ধারাবাহিকভাবে লাভজনক ব্যবসায় পরিণত করতে পারেন।
যারা রান্নার জন্য কাঠ ব্যবহার করেন তাদের কাটা কাঠ, কাঠের টুকরা এবং চেরাই কাঠ সরবরাহ করতে পারেন। এই ব্যবসাটি করতে গেলে আপনার কয়েকটি জিনিসের প্রয়োজন হবে যেমন, করাত, কুড়াল,দা, দড়ি। কিন্তু আপনি এই ব্যবসা থেকে যা লাভ করবেন তার তুলনারয় এগুলোর দাম খুবই কম।
আপনি কাঠ কাটার এই কাজটি নিজেই করতে পারেন। তবে যদি মনে করেন যে, আপনি এই কাজে যথেষ্ট শক্তিশালী না বা এই কাজে সময়ও দিতে পারবেন না তাহলে, আপনি এই ব্যবসার করার জন্য কাউকে নিয়োগ করতে পারেন। আপনার আশেপাশের বাড়ি, মার্কেট ও হোটেলে এবং খুচরা বিক্রেতাদের কাছে কাঠ বিক্রি করবেন। এভাবে বাড়ির উঠোনে একটি কাঠের ব্যবসা করেও কিন্তু আপনি অর্থ ইনকাম করতে পারেন।
৪) হর্টিকালচার/বাগান ব্যবসাঃ হর্টিকালচার বা বাগানের ব্যবসা হল ফুল, ফল ও সবজি চাষের অধ্যয়ন বা অনুশীলন। এই ব্যবসাটিও কিন্তু আপনি আপনার ফেলে রাখা উঠোনেই করতে পারেন। এই ব্যবসার ভাল দিকটি হল আপনার যা আছে তা দিয়ে আপনি শুরু করতে পারেন। এই আপনি ব্যবসাটি এক লক্ষ, ৫০,০০০ কিংবা মাত্র ২০,০০০ -৩০,০০০ হাজার টাকা দিয়েও শুরু করতে পারেন। এমনকি আপনি শূন্য মূলধন দিয়ে শুরু করতে পারেন। আপনি আপনার বাড়ির চারপাশে খুব ছোট অংশে ঘাস বা গাছপালা লাগানোর মাধ্যমে শুরু করতে পারেন। ফুল, ফল ও সবজি চাষের পর এগুলোর যত্ন নিন ভালো করে লালন পালন করুন। কিছুদিন পর ঠিকই এগুলো বিক্রি করে আপনি অর্থ ইনকাম করতে পারবেন।
৫) মৎস চাষঃ বাড়ির উঠোন থেকে পরিচালিত একটি অন্যতম ব্যবসা হতে পারে মাছ চাষ। দেখুন দেশের জনসংখ্যা কিন্তু দিন দিন বাড়ছেই আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রোটিনের চাহিদাও। কিন্তু প্রোটিনের যোগান সেভাবে হচ্ছে না। তুলনামূলক দাম কম হওয়ার মানুষ কিন্তু মাছ কেনার দিকে ঝুঁকছে বেশি।
আপনি খেয়াল করলে দেখবেন, বছরের পর বছর বেশ কিছু লোক মাছ চাষ করে কিন্তু তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। মাছ চাষের জন্য যদি আপনি সঠিক কাঠামো স্থাপন করে তবে মাছ চাষ একটি নিশ্চিত লাভজনক ব্যবসা হতে পারে আপনার জন্য।
এর জন্য আপনাকে যা করতে হবে তা হল আপনার বাড়ির উঠোনে একটি জায়গা পুকুরের মতো করে কাটতে হবে বা ট্যাঙ্ক তৈরি করতে হবে। পরে এতে চাষ উপযোগি মাছের পোনা ছাড়তে হবে। ৪ থেকে ৬ মাসের জন্য তাদের খাওয়ান, তারপর ওজন এবং আকারের উপর নির্ভর করে এর মধ্যে থেকে বড়গুলো বিক্রি করুন৷ তবে মনে রাখবেন, ট্যাঙ্কগুলো জীবাণুমুক্ত স্বাস্থ্যকর পোনার উপযোগী করতে হবে। কারণ এগুলো যদি ভালভাবে পরিচালিত না হয় তবে এটি আপনার বিনিয়োগকে লসের মুখে ফেলতে পারে।
৬) ছোট পোল্ট্রি খামারঃ হাসঁ-মুরগি পালন বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় একটি ব্যবসা। হাঁস-মুরগি এমন একটি ব্যবসা যা আপনি আপনার বাড়ির উঠোন থেকে ৫০ থেকে ৫০০টি পাখি নিয়ে শুরু করতে পারেন। এটা নির্ভর করবে আপনার হাতে থাকা নগদ টাকার উপর। তবে এক থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। এই পরিমাণের মধ্যে রয়েছে পাখির লালন-পালন, খাবার এবং ওষুধ।
তবে পোল্ট্রি খামার করতে গেলে একটি বিষয় মনে রাখবেন তা হল, পোল্ট্রিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ; সঠিকভাবে পরিচালনা না করা হলে, এটি বৃদ্ধি, উৎপাদন এবং পাখির কর্মক্ষমতাকে প্রভাবিত করবে। হাঁস-মুরগি-কবুতর যে ব্যবসাই করেন না কেন এর সবগুলোই কিন্তু লাভজনক। হাঁস-মুরগী বিক্রি করার পাশাপাশি এগুলো থেকে পাওয়া ডিম বিক্রি করেও কিন্তু প্রচুর অর্থ ইনকাম করা যায়।