ইসমাইল হানিয়ার পুরো নাম ইসমাইল আবদুস সালাম আহমেদ হানিয়া। তিনি ১৯৬৩ সালের ২৯ জানুয়ারি গাজা উপত্যকার আল-শাতি শরণার্থীশিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। তার আদি নিবাস ইসরায়েলের অন্তর্গত আশকেলনে। তাঁর জন্মের ১৫ বছর আগে ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় তার বাবা মা আশকেলন ছেড়ে উদ্বাস্তু হন।
ইসমাইল হানিয়া গাজায় জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলে পড়াশোনা করেন। এরপর গাজা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে তিনি হামাসে যোগ দেন। গাজা ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম ব্রাদারহুডের ছাত্র শাখার সদস্য ছিলেন ইসমাইল হানিয়া। ১৯৮৭ সালে হামাসের প্রতিষ্ঠালগ্নে সংগঠনটিতে যোগ দেন তিনি। ওই সময় ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি দখলদারির বিরুদ্ধে ইসলামিক আন্দোলন ইন্তিফাদার প্রথম ধাপ শুরু হয়, যা শেষ হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। প্রথম ইন্তিফাদার প্রায় সমসাময়িককালে হানিয়া স্নাতক পাস করেন। প্রথম ইন্তিফাদার সময় হানিয়াকে বেশ কয়েকবার আটক করে কারাদণ্ড দেয় ইসরায়েল। পরে তাঁকে দক্ষিণ লেবাননে ছয় মাসের জন্য নির্বাসনের পাঠানো হয়।
১৯৮৮ সালে তাকে আবারও গ্রেপ্তার করে ইসরায়েল এবং ৬ মাস কারাদণ্ড দেয়। ১৯৮৯ সালে তাকে আরও ৩ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯৯২ সালে মুক্তি পাওয়ার পর আবদুল আজিজ আল-রানতিসি, মাহমুদ জাহহার ও আরও ৪০০ জনের সঙ্গে ইসরায়েল তাকে লেবানন পাঠিয়ে দেয়। এরপর তারা দক্ষিণ লেবাননের মার্জ আল-জহুরে এক বছর অবস্থান করেন।
২০০৩ সালে হানিয়া ও হামাসের প্রতিষ্ঠাতা এবং আদর্শিক নেতা শেখ আহমাদ ইয়াসিনকে একসঙ্গে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তাঁরা যে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন, সেখানে বোমা নিক্ষেপ করে একটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান। যদিও সেখান থেকে তাঁরা জীবিত অবস্থায় বেরিয়ে আসেন। এর এক বছর পর ইয়াসিনকে হত্যা করা হয়।
ফিলিস্তিনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী
২০১৭ সালে ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান নির্বাচিত হন হানিয়া। তিনি খালিদ মিশালের স্থলাভিষিক্ত হন। অবশ্য এর আগে থেকেই তিনি বহুল পরিচিত মুখ ছিলেন। বিশেষ করে ২০০৬ সালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আন্তর্জাতিক মহলে তাঁর নামডাক বাড়তে থাকে। ওই বছর সংসদ নির্বাচনে বেশির ভাগ আসন পেয়ে জয়ী হয় হামাস। ইসমাইল হানিয়াকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।
কিন্তু খুব দ্রুতই মাহমুদ আব্বাসের দল ফাত্তাহর সঙ্গে হামাসের ক্ষমতা ভাগাভাগির ব্যবস্থাপনায় ফাটল ধরে। দুপক্ষের মধ্যে বিরোধ চরমে ওঠে। সপ্তাহব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর গাজায় ফাত্তাহর কার্যক্রম বন্ধ করা হলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে হানিয়াকে সরিয়ে দেওয়া হয়। জবাবে ২০০৭ সালে প্রেসিডেন্টের অনুগতদের সরিয়ে গাজার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় হামাস।
অনেক দিন ধরে নির্বাসিত জীবন যাপন করছিলেন হানিয়া। তিনি তুরস্ক ও কাতারে তাঁর নির্বাসনকাল কাটাচ্ছিলেন। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার পর হামাসের এক গণমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, টেলিভিশনে হামাস যোদ্ধাদের অভিযানের চিত্র দেখছেন হানিয়া। এ বিজয়ে আল্লাহকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রার্থনা করতেও দেখা যায় তাঁকে।