টি-শার্ট এখন তারুণ্যের প্রতীক। বিভিন্ন মনকাড়া ডিজাইন ও স্টাইলের কারণে টিশার্টের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছেই। টি-শার্ট এমন একটি ব্যবসা, যেখানে আপনার পণ্য তৈরি, উৎপাদন এবং বিক্রয় তুলনামূলকভাবে খুবই সহজ। এটি আগের তুলনায় অনেক সস্তা।
বর্তমানে মানেডিজিটাল প্রিন্টিং, বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটিং সোর্স এবং বিশাল মার্কেটিং নেটওয়ার্কগুলোর সাথে টি-শার্ট ব্যবসা শুরু করা আগের চেয়ে অনেক সহজ। তবুও, একটি টি-শার্ট ব্যবসা করার জন্য দুর্দান্ত ধারণা ছাড়াও একটা সফল পরিকল্পনা প্রয়োজন।
বাড়ি থেকেই কিভাবে নিজেই একটা টি-শার্ট ব্যবসা শুরু করবেন তার জন্য করার জন্য এখানে একটি রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১) একটা কনসেপ্ট তৈরি করুনঃ হোম বেজড টি-শার্ট ব্যবসা করার জন্য প্রথমে আপনি একটা কনসেপ্ট তৈরি করে নিন এবং পরবর্তীতে যেন সেটা সংশোধন করা যায় সেই ব্যবস্থাও রাখুন। মনে রাখবেন আপনি কেবল একটি টি-শার্ট তৈরি করছেন না, আপনি একটি ব্যবসাও তৈরি করছেন। তাই আপনার ইমেজ, ব্র্যান্ডিং এবং কোম্পানীর পরিচয়টি মাথায় রাখুন।
এর জন্য যা দরকার তা হলো, আপনার মাথা খাটিয়ে কিছু বুদ্ধি বের করা মস্তিষ্কে এবং আপনার ধারণাটি বিভিন্ন দিকে প্রসারিত করুন। কোনও নকশা বা স্লোগান হয়তো বা বাছাই করা খুবই কঠিন হতে পারে তাই একাধিক বিকল্প রাখা প্রয়োজন।
২) আপনার টি-শার্টগুলো ডিজাইন ও পরীক্ষা করুনঃ আপনার নিজের করা ডিজাইনটি পরিবর্তন করার সাথে সাথে আপনার টি-শার্টের ব্যবহারিক দিকগুলোতেও মনোনিবেশ করুন। একটি উচ্চ-মানের, উচ্চ-রেজোলিউশন ডিজাইন তৈরি করুন যা বিভিন্ন আকারে কাজ করে। আপনার কম্পিউটারে কোন ডিজাইন হয়তো বা দুর্দান্ত দেখালেও প্রিন্ট করার সময় সেগুলো কাপড়ের চেয়ে আলাদা হতে পারে। তাই সবচেয়ে ভালো হয় যদি পরিচিত একজন ডিজাইনার নিয়োগ দিতে পারেন। আপনার ডিজাইনকৃত টি-শার্টগুলো কেমন হচ্ছে তার প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ করার জন্য আপনার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন বা পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে মতামত নিন কিংবা কোন অনলাইন ফোরামের মাধ্যমে আপনি প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ করতে পারেন।
সময় এবং অর্থ বিনিয়োগের আগে আপনার তৈরিকৃত টি-শার্ট ক্রেতাদের কাছে কোন আবেদন তৈরি করবে কিনা তা নির্ধারণের জন্য বাজার গবেষণা পরিচালনা করুন। প্রথমে আপনার আদর্শ ক্রেতা কারা হবে তা জানার চেষ্টা করুন এবং আপনার কনসেপ্টের প্রতিক্রিয়া জানাতে সেই বাজারের ক্রেতাদেরও খুঁজুন। কারণ আপনার পন্যমান সর্ম্পকে কাস্টমারও জানতে চায়।
৩) ব্যবসায়িক পরিকল্পনা করুনঃ আপাত দৃষ্টিতে টি-শার্ট বিক্রি করা সহজ মনে হলেও কোনও পরিকল্পনা ছাড়া আপনি সময় এবং অর্থ নষ্ট করবেন না। মনে রাখবেন, আপনার ব্যবসায়িক পরিকল্পনার মাধ্যমে আপনার পণ্য, আদর্শ বাজার, আপনার আর্থিক অনুমান এবং বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে জানা যায়।
আপনি হয়তো কয়েক মিনিটের মধ্যে অনলাইনে তৈরিকৃত টি-শার্টগুলো বিক্রয় করতে পারেন, তবে আপনি যদি এর মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী উপার্জনের পরিকল্পনা করেন তবে আপনার অফিসিয়াল ব্যবসা করা উচিত। এক্ষেত্রে প্রথম যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো একটা ব্যবসায়িক নাম। আপনার নামটি আপনার টি-শার্টগুলোর প্রতিনিধিত্ব করবে।
৪) প্রিন্টার ও ম্যাটেরিয়াল নির্বাচন করুনঃ আপনার টি-শার্টটির প্রিন্ট যাতে করে স্পষ্ট সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আপনার টি-শার্টের স্থায়িত্ব সম্পর্কে জানতে হবে। উপাদান, কালি, স্থায়িত্ব, গুণমান এগুলোর ওপর নির্ভর করবে ব্যবসার প্রচার ও প্রসার।
আপনার টি-শার্টের উৎপাদন খরচ কেমন হবে তা অনুমান করার জন্য আপনাকে প্রিন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। আপনার লাভের মার্জিন মাথায় রাখুন; উৎপাদন খরচ কেমন হবে, লাভ কতটুকু করবেন, প্রাইস ট্যাগ লাগাবেন কি না সবকিছু মাথায় রাখার চেষ্টা করুন।
৫) টি-শার্টের দামঃ টি-শার্ট প্রিন্ট শেষ এবার দাম নির্ধারণের পালা। লাভের জন্য আপনার টি-শার্টের মূল্য নির্ধারণের সময় আপনাকে আপনার সমস্ত ব্যয় যোগ করতে হবে: মুদ্রণ এবং উৎপাদন খরচ, বিপণন, পরিষেবা বা সরবরাহ এবং অন্যান্য সমস্ত খরচ হিসাব করে দাম নির্ধারণ করতে হবে।
৬) টি-শার্ট বাজারজাতকরণঃ আপনার নতুন টি-শার্ট বাজারজাত করার অনেকগুলি উপায় রয়েছে তবে লক্ষ্য রাখতে হবে ক্রেতা যেনো খুব সহজেই খুঁজে পেতে পারে। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া একটি বড় বিজ্ঞাপনের টুলস্ হয়ে উঠেছে, আপনার পণ্যটি ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, পিনট্রেস্ট এবং অন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করতে পারেন। এছাড়াও আপনি নিজের টি-শার্টগুলো আপনার নিজের ব্যবসায়িক ওয়েবসাইটে, অনলাইন মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে এবং এমনকি ট্রেড শো, ক্রাফ্ট মেলা, স্থানীয়ইভেন্টগুলোতে এবং স্থানীয় বাজারের বিক্রয় করতে পারেন।